পালিত হচ্ছে বাবা দিবস। অনেকেই বলবেন সে আবার কি? বাবা দিবস কেন পালন করতে হবে? বাবাতো সব সময়ের জন্য। তাকে সব সময় যত্ন নিতে হবে, ভালোবাসতে হবে। বাবা কি কখনও ছেলে দিবস মেয়ে দিবস পালন করেন? একদম ঠিক। কিন্তু কেউ কি কখনও একবারের জন্য হলেও ভেবে দেখেছেন, বাবারা কতো কষ্ট করে আমাদেরকে একটা পর্যায়ে নিয়ে এসে ছেড়ে দেন। তারপরও তদারকি চলতেই থাকতো। চোখের আড়ালে না গেলেই যেনো বেশি খুশি হতেন।
আর আমরা কি করি। উপযুক্ত হওয়ার পর বেমালুম সব ভুলে যাই। ব্যস্ততা, প্রমোশন, বসের ভয় ইত্যাদির দোহাই দিয়ে দিন-রাত পার করতে থাকি। সময় মতো কাছে যেয়ে বসতেও পারি না। বাবা একসময় সন্তানের দেখা না পেয়ে আর সহ্য করতে পারেন না। বুকের মানিকের ভালোবাসা, কলিজার টুকরাটাকে কাছে না পাওয়ার বেদনায় একা একাই ডুকরে ডুকরে কাঁদেন। সেই কান্না কেউ দেখে না। একসময় অসুস্থ হয়ে পড়েন। ছেলে আসেন, মেয়ে আসেন, ডাক্তার ও আসেন। এসে বলেন, বয়স্ক মানুষ কিছুই করার নাই। অথচ এই বাবা মানুষটা কিভাবেই না আজ এই পর্যায়ে এসেছেন।
সকল কিছু দেখে শুনে অনুভব করে একসময় বাবার আর বাঁচতে ইচ্ছে করে না। কোনো কিছুই ভালো লাগে না। ছেলে-মেয়েরাও আফসোস করতে থাকে বাবার জন্য। তাদেরও উপযুক্ত হওয়ার সময়টুকুতে বাবাকে দেখতে না পারার ক্ষত কুঁড়ে কুঁড়ে মনটাকে ক্ষত-বিক্ষত করতে থাকে। এ এক মহাসংকট। উভয় সংকট তো বটেই!
আমাদের অধিকাংশ বাবারাই সন্তানের স্বচ্ছলতা দেখে যেতে পারেন না। আর সন্তানরা ও বাবার প্রতি দায়িত্ব পালন না করার কষ্টটুকু সারা জীবন বয়ে বেড়ায়। খুঁজতে থাকে নানা উপায়। কারণ এখন সেও বাবা। বাবার কদর বুঝে গেছে।
বাবাকে ভালোবাসতে গভীরভাবে মনে ধারন করার জন্যই দিনগুলোর উদ্ভব। অবশ্য এটা আমার ধারণা। আবার সত্য ভাবতেও ইচ্ছে করে। না হলে কেন এতো হা হুতাস। কেন কিছু না করতে পারার আক্ষেপ। বাবার জন্যে দোয়া করলেই তো হয়। অধিকাংশই একটা দুঃখ প্রকাশ করে যাচ্ছেন, বাবাকে
আরেকটু সময় দিলে ভালো হতো। কেন আর কটা দিন বাবা বাঁচলো না ইত্যাদি। দিবস টা শুধু একটা দিনই না। অনেক কিছুই ভাবতে ভালো লাগে।
ছোটবেলা, কিশোর, যৌবন, কর্মক্ষেত্রে পদার্পণ সবই মিশে থাকে একে অপরের সাথে। বিশেষ দিনটাতে বিশেষ কিছু কর্ম ও আমরা সাধ্যমত করি। এটা কিছুই মিন করে না। শুধু আত্মার শান্তি, আত্বতৃপ্তি। মনের সান্তনা মনকে প্রবোধ দেওয়া। মনে হয় ঐ তো বাবা আজও আছে, মনের একটা গোপন স্হানে।
নিজের অজান্তেই বলতে ইচ্ছে হয় বাবা… বাবা… বাবা…! এক সময় বলেই ফেলি আমার বাবা বা আমার আব্বা। অনেক সময়তো বাচ্চাদের বলেই ফেলি তুমি আমার আব্বা। সান্তনা এই আর কি!
প্রত্যেকটা দিবস ফিরে ফিরে আসুক। অদেখা মানুষগুলো মনের গভীরে আনাগোনা করুক। আর আমরা ও ভালোবেসে নানা স্মরণীয় মুহূর্তগুলোকে আরও স্মরণীয় করে রাখি।
লেখক: গুলশান চৌধুরী, কবি