বিনোদন
সাংবাদিকতার পথিকৃৎ কাঙাল হরিনাথকে দেখা গেছে কুষ্টিয়ার মঞ্চে
গ্রামীণ সাংবাদিকতার পথিকৃৎ কাঙাল হরিনাথ মজুমদারকে দেখা গেল কুষ্টিয়ায়। সেইসঙ্গে প্রজাপীড়ন আর নানা সংকটের প্রতিচ্ছবিও দেখা গেছে। যেখানে কাঙাল হরিনাথের সাহসী সাংবাদিকতা এবং জমিদারের উৎপীড়ন নিখুঁতভাবে ফুটে উঠেছে।
আর এসবই হয়েছে কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমি মঞ্চে। কুমারখালীর মতো গ্রামীণ জনপদে জন্ম নিয়েও কাঙাল হরিনাথ মজুমদার হয়ে উঠেছিলেন নিপীড়িত মানুষের আশা ভরসার আশ্রয়। সেই সত্য ঘটনাবলীই মঞ্চে উঠে এসেছে।
দেশ বরেণ্য নাট্যকার মাসুম রেজার রচনা ও নির্দেশনায় এ নাটকটি বোধন থিয়েটার কুষ্টিয়ার ২৮তম প্রযোজনা।
এ নাটক রচনা ও নির্দেশনা অভিপ্রায় নিয়ে মাসুম রেজা উল্লেখ করেছেন, এ নাটক রচনার অভিপ্রায় এই নয় যে, কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের জীবনী মঞ্চে উপস্থাপিত হবে। ততস্থলে এ নাট্যের পরতে পরতে কাঙালের সাংবাদিকতা ও সময়ের প্রয়োজনে তাঁর গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকার নিরলস ভূমিকা বিদ্ধৃত হয়েছে। সংবাদ ও সাংবাদিকতার প্রকৃত স্বরূপ দর্শনে দর্শকরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারবেন যে, একটা সংবাদপত্র কীভাবে বঞ্চনা ও নিপীড়নের শিকার মানুষকে শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড় করিয়ে দিতে পারে বৈরী শক্তির বিরুদ্ধে। যাঁরা সাংবাদিকতা করেন এ নাটক দর্শন তাঁদের অতি আবশ্যক বলে প্রতিয়মান হতে পারে।
এডিটর মহাশয়ের প্রতিটা চরিত্র ইতিহাস থেকে উৎসারিত তবু এ নাটক কোনো বিচারেই একটা ঐতিহাসিক নাটক নয়। এ নাট্যের সময়কাল ১৮৬৩ সালের গোড়ার দিক থেকে শুরু। এই সময়কালে কুমারখালী থেকে গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা শিরোনামে একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ হতে শুরু করে। যার এডিটর কাঙাল হরিনাথ মজুমদার। আঠারোশ’ বাহাত্তর সালে যখন পাবনা ও সিরাজগঞ্জে কৃষক বিদ্রোহের আগুন জ্বলে ওঠে তখন তৎকালীন জমিদাররা বিদ্রোহ সংগঠনের অভিযোগ আনেন গ্রামবার্ত্তার বিরুদ্ধে। কাঙালকে উপুর্যুপরি হত্যাচেষ্টা চালাতে থাকেন তাঁরা। সকল লোভ ও ভয়কে উপেক্ষা করে একজন এডিটর যখন বলে ওঠেন; জমিদার যদি তাঁর ছোবল সঙ্কুচিত না করেন, প্রজাদের যত্ন না নেন, তবে আমার পত্রিকা নীরব থাকবে না। সেই এডিটর তখন আর কেবল এডিটর থাকেন না। মানুষের কাতারে নেমে তিনি সেইসব মানুষেরই একজন হয়ে যান। এ নাট্যের সকল ঘটনাবলীই সত্যনির্ভর। সেইসব ঘটনাকে শব্দ, নিঃশব্দ ও সংলাপে মূর্ত করা হয়েছে।
নাটকটি উপস্থাপনার ক্ষেত্রে যে মঞ্চসজ্জা ব্যবহৃত হয়েছে তা বাস্তবতা বা ইতিহাসকে আশ্রয় করে নির্মিত হয়নি, কারণ সেই সময়কে প্রকৃতরূপে মঞ্চে স্থাপন যেমন দুরূহ তেমনি ব্যয়বহুল। ফলে আবহ তৈরীতে ইঙ্গিতবহ মঞ্চনির্মাণ করা হয়েছে। পোশাক পরিকল্পনার ক্ষেত্রে একটা সাধারণীকরণ মাপকাঠি মেনে চলা হয়েছে। যে ধরণের পরিধানে একজন কৃষককে বা জমিদারকে, ইংরেজ সাহেবকে আঁচ করে নেওয়া যায় সে ধরণের পরিচ্ছদেই সজ্জিত হবেন এডিটর মহাশয়ের অভিনয়শিল্পীরা। এডিটর মহাশয় বোধন থিয়েটারের ২৮তম প্রযোজনা।
যাঁরা এই নাটকে অভিনয় করেছেন, যাঁরা মঞ্চ, আলো, সংগীত, পোশাক, প্রপস ও পোস্টার পরিকল্পনা করেছেন তাঁদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতাসহ বোধনের প্রাণ-প্রতিক আমিরুল ইসলাম ও তাঁর সহযোগীদের প্রতিও সীমাহীন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন মাসুম রেজা। তিনি আরো উল্লেখ করেছেন, বোধন আমার নিজের দল আমি এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। নিজের দলে, নিজের লেখা নাটকের নির্দেশনা দিতে পারার আনন্দে আমি উল্লসিত। ইতিহাসে এমন সাক্ষ্য নেই যে কাঙালের সাথে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাক্ষাত হয়েছিলো, এমন সাক্ষ্যও নেই যে তাঁদের সাক্ষাত হয়নি। ফলে আমি এ নাট্যের অন্তে রবিঠাকুরের সাথে কাঙালের কল্পিত কথপোকথন দেখিয়েছি। ইতিহাসে কল্পনার স্থান না থাকলেও সাহিত্যে তা সিদ্ধ। কোন অভিপ্রায়ে আমি তা করেছি তা এ নাট্য দর্শনে বোধগম্য হবে।
এ নাটকে অভিনয় করেছেন, কাঙাল : আনোয়ার বাবু, স্বর্ণময়ী : নৌশিন নাওয়ার মাসুদ পৃথিবী, জলধর: কৌশিক আহমেদ শাওন, দয়াল : শহিদুর রহমান রবি, অক্ষয় : মোঃ ফাহিম হাসান, গোবিন্দ : সাঈম আহমেদ, কৈলাস : রিজভী উদ্দিন, এস.আই : শাহেদ সরোওয়ার্দী, কনস্টেবল : কৌশিক শাওন, কৃষক : মোঃ ফাহিম হাসান, মুন্সেফ : শহিদুর রহমান রবি, উকিল : আনিসুর রহমান, টেলার : সাইমুম কাতিব, দ্বিজ বাবু : আমিরুল ইসলাম, নায়েব: শাহীন সরকার, লালন : মীর আতিক আহমেদ, মশাররফ : মোহাম্মদ জুয়েল, শিক : শাহেদ সরোওয়ার্দী, ইশান রায়: আসলাম আলী, রবীন্দ্রনাথ : ওবাইদুর সৌরভ, রায়ত : শামীম চৌধুরী, সেলিম আহমেদ, কৌশিক শাওন, নান্টু আলম, সাঈম আহমেদ, রিজভী উদ্দিন, পাঞ্জাবী সেপাই: ফাহিম হাসান, শাহেদ সরোওয়ার্দী, কৌশিক শাওন, আনিসুর রহমান, সাঈম আহমেদ, রিজভী উদ্দিন। মেয়ের দল: আফরিন রহমান, শারমিন রহমান স্বর্ণা, নূর নায়লা হাসান আবৃত্তি, নাফিসা আনজুম অহনা, ছুম্মা হোসেন রিমঝিম।
নাটকে আবহ সঙ্গীত করেছেন: আশরাফুন নাহার, অয়ন চৌধুরী, অসীম কুমার নট্ট, মীর আতিক, পোশাক : দুলাল সাধু, ইমরুল কায়েস। কোরিওগ্রাফি : আশরাফুন নাহার, রূপসজ্জা: শাহীন সরকার, দুলাল সাধু, মঞ্চ পরিকল্পনা : শামীম সাগর৷ সেট ও পট নির্মাণ: শামীম চৌধুরী, ফাহিম হাসান, কৌশিক শাওন, মঞ্চ ও মহড়া ব্যবস্থাপক : শহীদুর রহমান রবি, প্রযোজনা ব্যবস্থাপক আসলাম আলী৷ প্রপস: ফাহিম হাসান, কৌশিক শাওন, পৃথিবী মাসুদ, সাঈম আহমেদ, আলো পরিকল্পনা : ফারুক খান টিটু, খন্দকার সাগর, প্রযোজনা অধিকর্তা : আমিরুল ইসলাম, অভ্যর্থনা : শাহনওয়াজ আনসারী মঞ্জু, কামরুজ্জামান পান্না, সুজন রহমান, আলম আরা জুঁই, অধ্যাপক নাসির উদ্দিন, মিলনায়তন ব্যবস্থাপনা : সুজন রহমান, কামরুজ্জামান পান্না, নাহার সরকার, অধ্যাপক নাসির উদ্দিন, সামিউর রহমান অনিক, সুলতানা, ইয়াসমিন ছবি, আলতাফুন নাহার দিপু, ফেরদৌসী বেগম, আছের আলী, ফারহানা মাসুদ বাঁধন, রোকসানা পারভীন, আসিফ রাহাত, আব্দুল্লাহ ও মুজিব শিপলু।