সব খবর সবার আগে
বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

জাতীয়

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ১০৫তম জন্মদিন আজ

বাংলা, বাঙালি, বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ– এক ও অবিচ্ছেদ্য অংশ। শেখ মুজিব মানেই বাংলাদেশ। মুক্তিকামী মানুষের স্লোগানের নাম শেখ মুজিব। বাঙালি জাতির চেতনার ধমনিতে প্রবাহিত শুদ্ধতম নাম শেখ মুজিব। তিনি চিরন্তন-চিরঞ্জীব; বাঙালির প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মাঝে অবিনাশী চেতনার নাম শেখ মুজিব। তিনি বাঙালির অসীম সাহসিকতার প্রতীক– সমগ্র বাঙালি জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বীর।

0 49

আজ ১৭ মার্চ। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৫তম জন্মদিন। ১৯২০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় সম্ভ্রান্ত শেখ পরিবারে তাঁর জন্ম। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ এই বাঙালির জন্মদিনটি জাতি একই সঙ্গে ‘জাতীয় শিশু দিবস’ হিসেবেও উদযাপন করবে।

গোটা জাতি আজ গভীর শ্রদ্ধা আর অবনত মস্তকে স্মরণ করবে সেই মহামানবকে, যাঁর হাত ধরেই এই ভূখণ্ডে রচিত হয়েছিল এক অমর কীর্তিগাথা। হাজার বছরের পরাধীনতার নাগপাশ ছিন্ন করে যিনি বাঙালিকে এনে দিয়েছিলেন একটি জাতিসত্তার পরিচয়। দিনটি উদযাপিত হবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়। এ জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। থাকবে সরকারি ছুটিও।

জাতির পিতার জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে জাতির পিতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার শপথ নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্কুলজীবনেই জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। কৈশোরে গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র থাকা অবস্থায় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেওয়ার কারণে প্রথমবারের মতো কারাবরণ করেন তিনি। ১৯৪০ সালে সর্বভারতীয় মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দেন। মেট্রিক পাসের পর কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে (বর্তমানে মওলানা আজাদ কলেজ) অধ্যয়নকালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেরেবাংলা একে ফজলুল হকসহ তৎকালীন প্রথম সারির রাজনৈতিক নেতাদের সান্নিধ্যে আসেন। ১৯৪৬ সালে তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ওই সময় থেকে নিজেকে ছাত্র-যুব নেতা হিসেবে রাজনীতির অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত করেন।

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পরপরই ঢাকায় ফিরে নতুন রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনা নিয়ে অগ্রসর হন তিনি। সহকর্মীদের নিয়ে ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগ গঠন করেন। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন তৎকালীন ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’ গঠিত হলে তরুণ নেতা শেখ মুজিব দলটির যুগ্ম সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৫৩ সালে তিনি দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৬ সালে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে দলের নামকরণ করা হয় ‘আওয়ামী লীগ’।
বঙ্গবন্ধু বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, আটান্নর আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন ও বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলনসহ পাকিস্তানি সামরিক শাসনবিরোধী সব আন্দোলন-সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বাঙালির অধিকার আদায়ের এসব আন্দোলনের কারণে বারবার কারাগারেও যেতে হয় তাঁকে।

১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের মনোনয়নে ইস্ট বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেমব্লির সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। একই বছর যুক্তফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় তাঁকে। আওয়ামী লীগপ্রধান হিসেবে ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন তথা বাঙালির মুক্তির সনদ ঐতিহাসিক ছয় দফা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। পাকিস্তানের স্বৈরশাসক জেনারেল আইয়ুব খান বঙ্গবন্ধুসহ নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের নামে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করে তাদের কারাগারে পাঠান। ঊনসত্তরের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাঙালি শেখ মুজিবকে কারামুক্ত করে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দিয়ে সম্মানিত করে।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাঙালি বঙ্গবন্ধুর ছয় দফার পক্ষে অকুণ্ঠ সমর্থন জানায়। পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দলের ম্যান্ডেট লাভ করে আওয়ামী লীগ; কিন্তু পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালির এ নির্বাচনী বিজয়কে মেনে নেয়নি। এরপর বঙ্গবন্ধু স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনকে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে প্রথমে স্বাধিকার আন্দোলন এবং চূড়ান্ত পর্বে স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ দেন।

এ আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় একাত্তরের মার্চে নজিরবিহীন অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেন বঙ্গবন্ধু। ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানের (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসমুদ্রে ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম; এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম’। এ ভাষণে সেদিন স্বাধীনতার ডাক দিয়ে ঐক্যবদ্ধ বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা সংগ্রামের দিকনির্দেশনা দেন তিনি।

একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আক্রমণ শুরু করলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডের বাসভবন থেকে ওয়্যারলেসে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এরপর বঙ্গবন্ধুকে তাঁর বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান এবং ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে বীর বাঙালি একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে আনে। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের।

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে স্বদেশে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধু। সদ্য স্বাধীন দেশের পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন কাজে আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৭৫ সালে জাতির অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে জাতীয় কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি। এর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ১৫ আগস্টের কালরাতে নিজ বাসভবনে ক্ষমতালোভী ঘাতকদের হাতে সপরিবারে নিহত হন। স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর জীবনাবসান ঘটে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে পাঁচজনের ফাঁসির রায় ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কার্যকর করা হয়। এর মধ্য দিয়ে জাতির ইতিহাসের অন্ধকার যুগের অবসান ঘটে।

স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, সাম্য ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় অবিস্মরণীয় ভূমিকার জন্য তিনি সারাবিশ্বে সমাদৃত। এসব ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য ‘জুলিও কুরি’ পদকে ভূষিত হন তিনি। এ ছাড়া বিবিসির এক জরিপে বঙ্গবন্ধু সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাচিত হন।

দিনের কর্মসূচি

রাষ্ট্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন। সেখানে কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকার পর ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেবেন তারা। তিন বাহিনীর সুসজ্জিত চৌকস একটি দল গার্ড অব অনার দেবে; বাজানো হবে বিউগল। পরে টুঙ্গিপাড়ায় শিশু-কিশোর সমাবেশে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।

দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেলে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার এবং সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ ক্রোড়পত্র ও নিবন্ধ প্রকাশ করা হবে। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ বিভিন্ন মসজিদে কোরআনখানি, মোনাজাত, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরসহ বিভিন্ন মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা সভা হবে।

আওয়ামী লীগের দু’দিনব্যাপী কর্মসূচিতে রয়েছে, আজ সকাল সাড়ে ৬টায় আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৭টায় ধানমন্ডি বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতি ও সাড়ে ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় তাঁর সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং আগামীকাল সোমবার বেলা ১১টায় রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবনে আলোচনা সভা। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভায় দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখবেন।

সর্বশেষ খবর এবং আপডেটের জন্য আমাদের সাবস্ক্রাইব করুন। আপনি যেকোনো সময় বন্ধ করতে পারবেন।

Loading...

আমরা কুকি ব্যবহার করি যাতে অনলাইনে আপনার বিচরণ স্বচ্ছন্দ হয়। সবগুলো কুকি ব্যবহারের জন্য আপনি সম্মতি দিচ্ছেন কিনা জানান। হ্যাঁ, আমি সম্মতি দিচ্ছি। বিস্তারিত