নবম সম্মেলনে নাসির উদ্দিন ইউসুফকে সভাপতি ও তৌফিক হাসান ময়নাকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করেছে বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার। তবে এবারও নেতৃত্বে খুব একটা পরিবর্তন আসেনি। এসেছেন কয়েকজন নতুন মুখ।
শুক্র ও শনিবার ঢাকার শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে গ্রাম থিয়েটারের সম্মেলন হয়। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন শনিবার ৪৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় পর্ষদ ঘোষণা করা হয়।
ঔপনিবেশিক নাট্য ও শিল্পরীতির অবসান ঘটিয়ে নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের দেখানো পথে নাটক নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার ঘোষণা এসেছে সম্মেলনে। ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্ম নিরেপক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার সাংস্কৃতিক সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে।
ঘোষণাপত্রে বলা হয়- আজ ১৯ অগাস্ট ২০২৩ বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারর’র ৯ম জাতীয় সম্মেলন ও নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের ৭৪ জয়ন্তী’র আয়োজনের দ্বিতীয় দিন, সমাপনীতে ঘোষণা করা হচ্ছে যে-
বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার বাঙালির ঐতিহ্যবাহী নাট্যাঙ্গিক ও শিল্প রীতি আশ্রিত জাতীয় নাট্যাঙ্গিক নির্মাণ ও চর্চা অব্যাহত রেখে ঔপনিবেশিক নাট্য ও শিল্পরীতির অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। আমরা আরো ঘোষণা করছি যে বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের স্বপ্নদ্রষ্টা নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন রচিত পথ ঔপনিবেশিক অবলেশ মুক্ত বাংলা নাটকের সঠিক পথ, এ কথায় বিশ্বাস রেখে আমরা আগামী দিনগুলোতে আমাদের সৃষ্টিশীলতা জারি রাখবো। বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের নেতৃত্বে আমরা এমন এক নাট্য চর্চায় নিমজ্জিত থাকতে চাই যে নাটক বাংলার জল কাদা, আকাশ, বৃক্ষ-তৃণলতা, পাখী- প্রাণীকূল ও শ্রমজীবি মানুষের জীবন সমৃদ্ধ নাট্যশিল্প। একই সাথে মুক্তির চেতনাবাহী।
এই সম্মেলন আরো ঘোষণা করছে যে মুক্তিযুদ্ধের চার মূলনীতি ১) গণতন্ত্র ২) সমাজতন্ত্র ৩) ধর্ম নিরপেক্ষতা ও ৪) জাতীয়তাবাদ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার তার সাংস্কৃতিক সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে।
সমতার সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ ও গণতন্ত্রের স্বপ্ন বিফলে যাবে।আমরা মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকার বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার এ দুর্ঘটনা রোধে সর্বশক্তি নিয়োগ করতে বদ্ধ পরিকর।
সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মীয় মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার উত্থানে আমরা ক্ষুব্ধ এবং এদের প্রতিরোধে সমমনা সকল সামাজিক সাংস্কৃতিক শক্তিকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলবো।
আগামীতে জাতীয় নির্বাচন। জাতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়।জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীরা নানা ভাবে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীন বিষয়ে নগ্ন হস্তক্ষেপ করে নির্বাচন বানচাল করে অনির্বাচিত সরকারের হাতে রাষ্ট্রর ক্ষমতা দিয়ে লুন্ঠন ও শোষন অব্যাহত রাখতে তৎপর। আমরা এই ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে স্বাধীন ও গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত রাখবো।
আমরা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের রাজনৈতিক শক্তিকে রাষ্ট্র পরিচালনায় দেখতে চাই। কিন্তু একই সাথে এ কথা উচ্চারণ করতে চাই আমরা দুর্নীতি মুক্ত, লুন্ঠন মুক্ত একটি গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল শিক্ষাব্যবস্থার আলোকে সুসম রাষ্ট্র দেখতে চাই যা তিরিশ লক্ষ শহীদের স্বপ্ন , দু’লক্ষ ধর্ষিত নারীর স্বপ্ন ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা’র সমার্থক।
জয় হোক বাঙলা নাটকের। জয় হোক বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের। জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু।
শুক্রবার সম্মেলনের প্রথম দিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা, সেলিম আল দীন পদক প্রদান এবং ঐতিহ্যবাহী লোকপালা হয়। সম্মেলনের উদ্বোধন করেন মুক্তিযোদ্ধা ও শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ।
দ্বিতীয় দিনের আয়োজনে শনিবার ছিল মুক্ত আলোচনা, গঠনতন্ত্র সংশোধন, অঞ্চল বৃদ্ধি, ভারতীয় অতিথিদের আলোচনা পর্ব।
এদিন সারা দেশ থেকে আসা গ্রাম থিয়েটার সদস্যদের উপস্থিতে বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের কেন্দ্রীয় পর্ষদ, বিভাগীয় সমন্বয়কারী, আঞ্চলিক সমন্বয়কারী ও পশ্চিমবঙ্গের সমন্বয়কারীদের নাম ঘোষণা করা হয়।
ঘোষিত কমিটিতে হুমায়ুন কবির হিমু, ড. লুৎফর রহমান, আমিরুল ইসলাম, আসাদুল্লাহ ফারাজী, অধ্যপক হারুন রশীদ, কামাল বায়োজীদ, শুভঙ্কর চক্রবর্তী সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
যুগ্ম সম্পাদক হয়েছেন প্রদীপ আগরওয়াল, কামার উল্লাহ সরকার কামাল। সাইদ রিংকু সাংগঠনিক সম্পাদক, শরীফ হাসান চৌধুরী (সউদ) সহসাংগঠনিক সম্পাদক, আনন জামান প্রশিক্ষণ সম্পাদক, খন্দকার রাকিবুল হক সহপ্রশিক্ষণ সম্পাদক, ওয়াসিম আহমেদ অর্থ সম্পাদক, অতনু করঞ্জাই আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, জোবায়ের শিবলী দপ্তর সম্পাদক, মোতাহার হোসেন রাজু সহদপ্তর সম্পাদক, রুবাইয়াৎ আহমেদ গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক, শাহাজাদা সম্রাট সহ-গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক, জুলফিকার চঞ্চল তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক, আব্দুল হান্নান প্রচার সম্পাদক এবং ওয়াহিদ আনছার হিল্লোল সহ-প্রচার সম্পাদক হয়েছেন।
নির্বাহী সদস্য হয়েছেন- শিমূল ইউসুফ, ইউসুফ খসরু, রতন দাস, সুখময় রায় বিপলু, আবুল কাশেম, আসলাম আলী, হাবিবুর রহমান হাবিব, ফারুক হোসাইন, আব্দুল সালাম, আল কবনুল নাহার কসমিক, গাজিবর রহমান, মোস্তফা রতন, ইউসুফ খসরু, মশগুল হোসেন ইতি।
ঢাকা বিভাগে সালাম সাকলায়েন, রাজশাহী বিভাগে নিতাই কুমার সরকার, রংপুর বিভাগে মমতা চাকী, বরিশাল বিভাগে মো. মনিরুজ্জামান, খুলনা বিভাগে একরামুল হক লিকু, সিলেট বিভাগে রজত কান্তি গুপ্ত, ময়মনসিংহ বিভাগে রেজাউল করিম লেবু, চট্টগ্রাম বিভাগ এজাহার হক মিজান বিভাগীয় সমন্বয়কারী হয়েছেন।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সমন্বয়কারী হিসেবে সঞ্জয় সাহা ও শুধা কুম্ভকারকে মনোনীত করা হয়।