ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়ংকর হয়ে উঠছে। দিন দিন বাড়ছে মৃত্যু, বাড়ছে রোগী। এ পটভূমিতে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বারবার জরুরি অবস্থা জারি কিংবা মহামারি ঘোষণার কথা বললেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তা উড়িয়ে দিচ্ছে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ডেঙ্গুর এমন আগ্রাসী পরিস্থিতির জন্য দায়ী স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য বিভাগের অদূরদর্শিতা এবং অব্যবস্থাপনা। তারা বলছেন, ডেঙ্গু রোগীর প্রাথমিক সেবা নিশ্চিত করতে নগরে সিটি করপোরেশনের চিকিৎসাকেন্দ্র না থাকা, মশা নিধনে দীর্ঘমেয়াদি কর্ম পরিকল্পনার অভাব, এডিস মশার বিস্তার ও রোগী ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতার কারণে শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য এ রোগ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে ১ হাজার ৭৫৫ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত মারা যাওয়া ৯ জনের মধ্যে ঢাকার ৮ জন এবং ঢাকার বাইরের একজন। এখন পর্যন্ত এ বছর ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যু হয়েছে ১৫৫ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় যত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, এর বেশিরভাগই ঢাকার বাইরের। এ সংখ্যা ৯১০ জন। আর ঢাকার ৮৪৫ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, বর্তমানে ৫ হাজার ৯৩৭ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এর মধ্যে ঢাকাতেই ৩ হাজার ৫২২ জন, আর বাকি ২ হাজার ৪১৫ জন ঢাকার বাইরে। গত ১ জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ২৭ হাজার ৫৪৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, এর মধ্যে ছাড়া পেয়েছেন ২১ হাজার ৪৫৫ জন। জুলাইয়ের শুরু থেকে ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ নেয়। এ মাসের ২০ দিনে ১৯ হাজার ৫৬৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ১০৮ জন মারা গেছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি। বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষ ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে রয়েছেন। নতুন ধরনের কারণে উপসর্গ ছাড়া অনেকেই আক্রান্ত হয়ে হালকা অসুস্থতাবোধ করছেন। তবে প্রায়ই এ ভাইরাসে সৃষ্ট জ্বর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। প্রাথমিকভাবে শনাক্ত ও উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নিলে রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন। মৃত্যুও কমে আসে।
ইউরোপীয় রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের (ইসিডিসি) তথ্য বলছে, বর্তমানে বিশ্বের ১০০টির বেশি দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ চলছে। গত ৮ জুন পর্যন্ত বিশ্বে প্রায় ২২ লাখ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর বেশির ভাগ দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে। সর্বোচ্চ রোগীর তালিকায় ব্রাজিল, বলিভিয়া, পেরু ও আর্জেন্টিনা রয়েছে। তবে এসব দেশের মধ্যে আক্রান্ত রোগীর তুলনায় মৃত্যুর হার বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশি।