সব খবর সবার আগে
বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

সাহিত্য

হাহাকার

0 229

রিক্সা থেকে নামতেই এক বৃদ্ধার সাথে ধাক্কা খায় দেবযানী। ঘুরে দাঁড়াতেই দেখে বৃদ্ধার হাতের বাটিটা নীচে পড়ে গেছে। বাটিতে রাখা পয়সা ও টাকা এলোমেলো পড়ে আছে। দু একজনের সহায়তায় টাকা পয়সা গুলো মাটি থেকে উঠিয়ে বৃদ্ধার হাতে দেয়। বৃদ্ধাকে দেখে তার ঠিক ভিখেরি মনে হয় না। বেশ আদব-কায়দা জানা একজন মুরুব্বী মনে হয় । তার মায়া হয় সে মুরুব্বীকে ডাকে কিন্তু বৃদ্ধা কোনো দিকে না তাকিয়ে কাপড়ে মুখটা ঢেকে পালাতে চায় ।

দেবযানী বৃদ্ধার পিছু পিছু যায়। দেখে পাশেই দাঁড়িয়ে এক বৃদ্ধ। চেনা চেনা লাগে। সে সংগে সংগে বৃদ্ধার মুখের কাপড় সরিয়ে দেয়, ভালো ভাবে দেখতে থাকে।সে চিনতে পারে তারপরও সব জিজ্ঞেস করে ভালোভাবে জানতে চায়। আজ থেকে ১৫ বছর আগে সে চলে এসেছে শহরে আর তো যাওয়া হয়নি গ্রামে। কতো কিছুর পরিবর্তন হয়েছে। ছোটরা বড় হয়েছে বড়রা বৃদ্ধ হয়েছে। ঘরবাড়ি রাস্তাঘাটের ও নিশ্চয়ই পরিবর্তন এসেছে।আর মানুষ, তাদের পরিবর্তন তো আসবেই। অভাবী মানুষের পরিবর্তন বেশি হবে সেটাই তো স্বাভাবিক।

দেবযানী মুহূর্তেই কোথায় যেন এক ভাবনার জগতে হারিয়ে যায়। সে ভালো চাকরি করে বিলাসিতাময় জীবনযাপন তার পরও কোথায় যেনো হাহাকার। অনেক দিন থেকেই সে মুরুব্বী দেখলে তাকিয়ে থাকে। মনে করে আহা! এমন একজন যদি তার কেউ থাকতো, তাহলে খুব ভালো হতো। হঠাৎ বৃদ্ধা তার হাত ধরে টান দেয়। দেখে একটা গাড়ি তার দিকে ছুটে আসছে। সে তারাতারি বৃদ্ধবৃদ্ধাকে নিয়ে সরে যায়। এবার বৃদ্ধা বলেন, তোমাকে চিনতে পারছি মা, তুমি দেবযানী (দিবু) ।

দেবযানী আর কোনো কথা না বাড়িয়ে তাদের নিয়ে বাসায় যায়। বাসার মেয়ে টাকে তাদের সবকিছু দেখিয়ে দিতে বলে। তারা আগে ফ্রেস হয়ে খাওয়া দাওয়া করে। এবার দেবযানী তাদের রেস্ট নিতে বলে। এমন একজন মুরুব্বীর জন্য সে কতোদিন অপেক্ষা করেছে। ভাবতো যদি তার একজন মুরুব্বী থাকতো তাহলে ভালোই হতো! বৃদ্ধা বলতে কি বোঝায় তা সে জানে না। নানী দাদী বা ঐ জাতীয় বয়স্ক মুরুব্বী বলতে আপনজন তার কখনোই ছিল না। মা তো কম বয়সেই মারা গেছেন।এখন সে আর তার এক বান্ধবী মিলে একটা বাসা নিয়ে থাকে।

দেবযানী নিজেও ফ্রেস হয়। খাওয়া দাওয়া করে অফিসের কাগজপত্র ঠিকঠাক করে। নিজেও একটু রেস্ট নেয়। বৃদ্ধা জেগে ওঠেন। দেবযানী তাকে পাশে বসিয়ে সব জানতে চায়। বৃদ্ধা বলেন, দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। কেউই তাদের দেখভাল করতে পারেনা। ছোট মেয়ে চাকরি করে। মাঝে মাঝেই সাহায্য করত। এখন জামাই তার উপর অত্যাচার করে তাই তার থেকে সে কিছু নেয় না। দেবযানী তাদের নিজের কাছে রেখে দিতে চায়। কিন্তু বৃদ্ধা রাজী হয় না। বলে আগে বাড়ি যাই তারপর ভেবে দেখবো।

দেবযানী জানতে চায় তারা কোথায় এসেছিলেন কার কাছে? কেন? বৃদ্ধা বলেন, এক আত্মীয়র বাসায়। বাড়িটা তাদের কাছে বিক্রি করতে চাই। দুই জামাই মেয়েদের উপর অনেক অত্যাচার করে। তোমার চাচা কখন মারা যান তাতো বলা যায় না। তাই তারাতারি সব ব্যবস্থা করতে চাই। দেবযানী বলে ঠিক আছে, সব ব্যবস্থা হবে। তো ভিক্ষে করছিলেন কেন? বৃদ্ধা বলেন, বাস এখানেই নামিয়ে দিয়েছে। যে কাপড়ের ব্যাগ ছিলো তা বাসের মধ্যেই চলে গেছে। এখন কিছুই নাই মা, তাই ভিক্ষে ছাড়া উপায় ছিল না। দেবযানী সব শুনে একটা উবার ভাড়া করে তাদের সেই বাড়িতে পৌঁছে দেয়।

বাসায় ফিরে ঘুটঘুটে অন্ধকারে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দেবযানী ভাবছে, কতো বৃদ্ধা না খেয়ে কতো কষ্ট করে। অথচ কাউকে সে নিজের মতো করে এখন ও পেলো না। খুব কান্না পাচ্ছে তার।
আজ এতো অন্ধকার কেন? চারপাশ এতো আলো অথচ তার চোখ শুধু অন্ধকার ই দেখছে। আসলে তার মন ভালো নেই। মনের আলো না থাকলে কি আর বাইরের আলো ভালো লাগে?

দেবজানি শান্তিপ্রিয় মানুষ। যা ভালো লাগে তাই করে। তাতে আজ পর্যন্ত তার কোনো ক্ষতি হয় নাই। বরং একটা সময় মানুষের ভালোবাসাটাই পায়। এসবেই সে অভ্যস্ত। বয়স ভালোই হয়েছে এখনও বিয়ে করেনি। পড়া লেখা শেষ করে কি এক গবেষণার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাকে কেউ কিছু বলে না। স্বাধীন!

রাহাত মাঝে মাঝেই তাকে তাগাদা দেয়, সে ডিসিশন নিতে পারে না। তার ইচ্ছে করে সংসার করতে, রাহাতকে নিয়ে সুখী হতে, কিন্তু মনের মধ্যে যে কতোটা হাহাকার তার, তা একমাত্র সেই জানে!

গুলশান চৌধুরী, কবি ও গল্পকার।

সর্বশেষ খবর এবং আপডেটের জন্য আমাদের সাবস্ক্রাইব করুন। আপনি যেকোনো সময় বন্ধ করতে পারবেন।

Loading...

আমরা কুকি ব্যবহার করি যাতে অনলাইনে আপনার বিচরণ স্বচ্ছন্দ হয়। সবগুলো কুকি ব্যবহারের জন্য আপনি সম্মতি দিচ্ছেন কিনা জানান। হ্যাঁ, আমি সম্মতি দিচ্ছি। বিস্তারিত